স্বদেশ ডেস্ক:
কোনো বৃষ্টি-বাদল নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই বান্দরবানে পাহাড়ের উঁচুতে স্বচ্ছ বগা লেকের পানি ঘোলা হয়ে উঠেছে। কিছুটা দুর্গন্ধযুক্ত এই পানি এখন আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্বচ্ছ লেকের পানি হঠাৎ ঘোলা হয়ে যাওয়ায় পাড়ে বসবাসকারী বম, মারমাসহ পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জন্য অনেকটা দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে রুমা উপজেলার কেওক্রাডং রেঞ্জে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় নয়নাভিরাম এই লেকটির অবস্থান। অনেকেই এটিকে ড্রাগন লেকও বলে থাকেন। উঁচু পাহাড়ের উপর স্বচ্ছ পানির এই লেকটি পর্যটকদের বেড়ানোর জন্য উৎকৃষ্ট স্থান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিন বছর পর লেকের পানি আবারো ঘোলা হয়েছে। আর পানি ঘোলা হওয়ার আগে লেকের অনেক ছোট বড় মাছ মারা গেছে। লেকের পাড়ের বম সম্প্রদায়ের বয়স্করা এখনো বিশ্বাস করেন লেকের গভীরে থাকা ড্রাগন (বড় সাপ) লেজ নাড়ানোর কারণে পানি ঘোলা হয়ে থাকে। পাহাড়িরা যে বিশ্বাসই করুক না কেন লেকের পানি ঘোলা হওয়াটাকে গবেষকরা অন্য দৃষ্টিতে দেখেন। গবেষকরা বলে থাকেন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে বগালেকের সৃষ্টি। আর এ কারণেই কয়েক বছর পর পর লেকের পানি ঘোলাটে হয়ে ফসফরাস যুক্ত হয়। এ সময় লেকের পানি ব্যবহার করা যায় না। তবে সপ্তাহখানেক এর মধ্যেই ঘোলা পানি আবার স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। বম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস লেকের পানি যখন ঘোলা হয় তখন পাহাড়ে ফসলও ভালো হয়। তবে এটি তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর হয়ে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
লেক পাড়ের বাসিন্দা সিয়াম বম জানিয়েছেন, স্বচ্ছ লেকের পানি ঘোলা হয়ে যাওয়ায় পর্যটক এবং তাদের জন্য দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। তবে এটি তাদের জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। বম সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা জুমলিয়ন আমলাই জানিয়েছেন, একটি ড্রাগন (সাপ) মেরে ফেলার পর এই লেকের সৃষ্টি হয়েছে বলে এমন মিথ প্রচলিত আছে। এমন অনেক রূপকথাই প্রচলিত আছে বগালেক নিয়ে। ছোটকাল থেকেই তিনি লেকের পানির এই অবস্থা দেখে আসছেন বলে জানিয়েছেন। বম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা রেভারেন্ট জারলম বম জানান, স্বচ্ছ পানি ঘোলা হয়ে যাওয়া পর্যটকদের কাছে বিস্ময়কর হলেও বম সম্প্রদায়ের কাছে এটি অনেক পুরনো ঘটনা। যখন বগালেকের পানি ঘোলা হয় তখন এই লেক থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের রাইংখ্যং লেকের পানিও ঘোলা হয়ে থাকে বলে এমন কথা এলাকায় প্রচলিত রয়েছে।
জানা গেছে, বগালেকের গড় গভীরতা প্রায় ১৫১ ফুট। সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৫ মিটার এর কাছাকাছি। বান্দরবানের রুমা উপজেলার থেকে চাঁদের গাড়িতে এই লেকে যাওয়া যায়। এই লেকের পরেই দেশের সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং ও তাজিংডং।